শেষ আপডেট: 15th April 2022 14:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সেই এপ্রিল মাস, তিনবছর আগের এপ্রিল ভয়াবহ (Burnt Down) হয়ে রয়েছে উয়াড়ি ক্লাবের (Wari Club) কর্তাদের কাছে। সাতসকালে ময়দান (Kolkata Maidan) থেকে কর্তাদের বাড়িতে ফোন গিয়েছিল, ‘‘স্যার, আপনাদের ক্লাব জ্বলে পুরো শেষ হয়ে গিয়েছে, আসুন স্যার দ্রুত, বাকিটা যদি বাঁচাতে পারেন!’’
২০১৯ সালের ১ এপ্রিল। হোসপাইপ দিয়ে সবে ভোরের রাজপথ ধোয়া হচ্ছে। মেয়ো রোডের পাশের ক্লাব সেইসময় জ্বলছে দাউদাউ করে। টাউন, রাজস্থান, বিজি প্রেসের ক্লাব তাঁবুতে থাকা মালিরা রাস্তায় নেমে এসে চিৎকার লাগিয়েছেন, দাদা, আমাদের উয়াড়ি ক্লাবটাকে বাঁচান, সব শেষ হয়ে গেল!
Bar Puja: ময়দানে ফিরল আবেগ, বারপুজেোর চেনা ছবি, দু’প্রধানে উৎসবের রঙ মিশল মিস্টি মুখে
কে কোন ক্লাবে কাজ করেন, ভুলে গিয়েছেন। ক্লাবটাকে বাঁচাতে হবে। দমকলের ইঞ্জিন এল, কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করলেও সব নথি শেষ হয়ে গেল। ১২৩ বছরের একটা ক্লাবের ইতিহাস নিমেষে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল। ওই ক্লাবের সচিব সিএবি-র নামী কর্তা প্রবীর চক্রবর্তী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি প্রায় কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন দুঃখে, হতাশায়।
সেই ক্ষত মিটল অবশেষে শুক্রবার বাংলা নববর্ষের দিনে। নতুনভাবে ফের পথ চলা শুরু হল উয়াড়ির। তাঁবুতে পুজো হল সাড়ম্বরে। ঝাঁ চকচকে তাঁবু দেখে কে বলবে, এই ক্লাবের দেওয়ালে ছিল কিছুদিন আগেও পোড়া আস্তরণ।
উয়াড়ি অ্যাথলেটিক ক্লাবের জন্ম আদতে পূর্ববঙ্গে। পরবর্তীকালে পাখি সেন, পঙ্কজ গুপ্ত, দীণেশ দত্ত সহ বেশ কিছু কর্তারা কলকাতার ময়দানে উয়াড়ি ক্লাব শুরু করেছিলেন। তখন বাংলাদেশের উয়াড়ির শাখা হিসেবেই কলকাতার উয়াড়ীর পথ চলা (১৮৯৮) শুরু হয়।
একটা সময় কলকাতা লিগে দাপটের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল,মোহনবাগান এবং মহামেডানকে হারিয়েছে উয়াড়ি। ১৯৪৭ সালের ২১ মে লিগে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছিল উয়াড়ি। এই ক্লাব বাংলাকে অসংখ্য ফুটবলার উপহার দিয়েছে। এই ক্লাবে অবদান রয়েছে প্রবাদপ্রতীম কর্তা বাঘা সোমেরও। দিলীপ পালিত, সমরেশ চৌধুরী, তুষার রক্ষিত শুরু করে বাসুদেব মন্ডল থেকে হালফিলের কিংশুক প্রামানিক, প্রীতম কোটাল সকলের উত্থান এই ক্লাব থেকেই।
এদিন সেনা আধিকারিকদের হাত দিয়ে নতুন ক্লাব তাঁবুর উদ্বোধন হয়েছে। ছিলেন আইএফএ-র চেয়ারম্যান তথা এআইএফএফের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্তসহ আইএফএ সচিব জয়দীপও।
নতুন তাঁবু দেখে চোখে জল সচিব প্রবীর বাবুর। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এই দুঃসময়ে অনেকেই পাশে ছিলেন, আবার অনেকেই না চেনার ভান করেছেন। আমরা সেই অতীত ভুলে আবারও পথ চলতে চাই। তবে পুরনো সব নথি শেষ হয়ে গিয়েছে, সেগুলি আর ফিরে পাব না, এটাই কষ্টের।’’